অজানাকে জানার লক্ষে...

Monday 18 July 2016

গলফার সিদ্দিকুরের অলিম্পিক যাত্রা

গলফার সিদ্দিকুর রহমান ২য় বাংলাদেশী ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব যিনি  অলিম্পিক গেমসের  জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন । গত রবিবার, ১০ জুলাই  ২০১৬  তারিখে  তিনি RIO 2016 গেমসের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় ৫৬ তম স্থান অর্জন করেন । ২০১৬ সালের ১১ জুলাইয়ের মধ্যে গলফ রাঙ্কিংয়ে ৬০ এর মধ্যে থাকতে পারলেই সিদ্দিকুর সরাসরি অংশ নেয়ার সুযোগ  পেতেন অলিম্পিক গেমসে।
১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক থেকে নিয়মিত অংশ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ। আগে বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিকে জায়গা করে নিতে হতো বিশেষ কোটা ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে। এর আগে ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা অলিম্পিকে শুটিংয়ের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে কোয়ালিফাই স্কোর করে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে সরাসরি মূল  পর্বে  অংশ নেন এদেশের কৃতী শুটার কাজী শাহানা পারভীন ।


১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর সিদ্দিকুর রহমানের জন্ম মাদারীপুরে। পারিবারিক নাম মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর বাবা আফজাল হোসেন এবং মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। চার ভাইয়ের মধ্যে সিদ্দিকুর তৃতীয়।  জন্ম থেকেই প্রচন্ড দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে উঠেন তিনি। স্বাধীনতার পরপর বাবা আফজাল হোসেন পুরো পরিবার নিয়ে পেটের দায়ে এসে উঠেছিলেন ঢাকার খানিক বাইরে ধামালকোটের বস্তিতে। সেই বস্তিতে বেড়ে উঁঠতে উঁঠতে সিদ্দিকুর একসময় পাশের বাড়ির এক ছেলের সাথে চলে যান ঢাকাস্থ কুর্মিটোলায় অবস্থিত সেনাবাহিনীর গলফ ক্লাবে। সেখানে 'বলবয়' হিসেবে বল কুড়ানোর কাজ করতে শুরু করেন, তখন তিনি পড়তেন দ্বিতীয় শ্রেণীতে। এভাবে তাঁর সামান্য কিছু আয় হতে থাকে। আর পাশাপাশি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় এই খেলার।
একসময় 'বলবয়' থেকে 'ক্যাডি' পদে পদোন্নতি হয় তাঁর। এবারে তিনি খেলোয়াড়দের পেছন পেছন তাদের সরঞ্জাম বহন করার এবং টুকটাক সহায়তা করার সুযোগ পান। আর এভাবে এই খেলার প্রতি তার অনুরাগ জন্মে। তিনি বেতনের জমানো টাকা দিয়ে লোহার দোকানে গিয়ে লোহার রড দিয়ে গলফ ক্লাবের মতো একটা কিছু তৈরি করে নেন। পড়ালেখার পাশাপাশি ক্যাডি'র দায়িত্ব পালন করেও সিদ্দিক তখন তার নতুন লোহার ক্লাব দিয়ে গলফ চর্চা করতেন।
২০০০ সালের দিকে বাংলাদেশের গলফ ফেডারেশনের উদ্যোগে দেশে প্রতিযোগিতামূলক গলফে বলবয়-ক্যাডি হয়ে আসা সুবিধাবঞ্চিত গলফারদের সুযোগ করে দেয়া হয়। সেই সুযোগে কোচের অধীনে শুরু হয় সিদ্দিকুরের  পথ চলা । তাঁর মনোযোগ, আগ্রহ এবং ধৈর্য্য ছিল আর অন্য সবার থেকে অনেক বেশি, যার ফল তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে পেতে থাকেন । সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে তিনি জিততে শুরু করলেন । একে একে ১২টি অপেশাদার গলফ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে ফেললেন সিদ্দিক।
মনোযোগ, আগ্রহ এবং ধৈর্য্য ও অপেশাদার গলফে তাঁর সাফল্য তাঁকে টেনে নিলো পেশাদার গলফের দিকে এবং ২০০৮ সালে শুরু হয় তাঁর পেশাদার গলফের অগ্রযাত্রা । যথারীতি সেখানেও সাফল্য ধরা দেয় সিদ্দিকুরের । ২০০৮  ও ২০০৯ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সার্কিটের ৪টি পোশাদার শিরোপা জিতেন সিদ্দিকুর।

No comments: